ব্যান্ডউইথ (Bandwidth) কি, এটা খায় না মাথায় দেয় ?

ব্যান্ডউইথ কথাটার সাথে সবাই বেশ পরিচিত । ব্যান্ডউইথ (Bandwidth)  কি ? ব্যান্ডউইথ (Bandwidth) খায় না মাথায় দেয় ? এই ধরনের প্রশ্ন প্রায় অনেকের মনেই জাগে । আমরা বেশ কিছুদিন আগে ইন্টারনেট বা ব্রডব্যান্ড এর মাধ্যমে আই এস পি প্রতিষ্ঠা করে আয়ের মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম " করতে পারেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ঝুকিহীন দারুন লাভজনক ব্যাবসা । " । অনেকেই ব্যাবসা করতে আগ্রহী কিন্তু ব্যান্ডউইথ , আই এস পি , আই আই জি ইত্যাদি ধারনা তাদের মাথার উপর দিয়ে গেছে । তাই আজকের এই পোষ্ট । আশা করি ভাল কিছু উত্তর আপনারা আজ পাবেন ।


ব্যান্ডউইথ আসলে কি ?

Bandwidth (ব্যান্ডউইথ) বলতেএকটি নেটওয়ার্ক প্রোটকল বা মডেম কানেকশনের মধ্যদিয়ে কি পরিমাণ ডাটা প্রেরিত হচ্ছে তা বোঝায়। এটি সাধারণত “বিটস পারসেকেন্ড” বা bps দ্বারা পরিমাপ করা হয়। ব্যান্ডউইথকে একটি হাইওয়েরমধ্য দিয়ে কার …চলাচল দ্বারা তুলনা করলে ব্যাপারটি সহজে বোঝা যায়।এখানে হাইওয়ে হচ্ছে নেটওয়ার্ক আর কার হচ্ছে প্রেরণকৃত ডাটা। হাইওয়ে যত বেশি প্রশস্থ তত বেশি কার একসাথে চলাচল করতে পারে। তার মানে তত বেশি কারএকসাথে নিজের গন্তব্যে পৌছাঁতে পারে। একই নিয়ম কম্পিউটার ডাটার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যত বেশি ব্যান্ডউইথ বেশি ডাটা বা তথ্য একসাথে একটি নির্দিষ্টসময়ের মধ্যে প্রেরণ করা যায়।

ব্যান্ডউইথ কি উৎপাদন করা হয় ?

অনেকের মনেই টিভি , রেডিও বা নেটে পড়ে শুনে মনে করে ব্যান্ডউইথ উৎপাদন করা হয় । যদি তাই হত তবে সবাই মিল ফ্যাক্টরি বা চাষাবাদের মাধ্যমে সবাই ব্যান্ডউইথ বানানো শুরু করে দিত । কিন্তু না আসলে তা নয় । উৎপাদন কথাটার মাধমে আমাদের আসলে শুভংকরের ফাঁকি দেয়া হয় । কারন ব্যান্ডউইথ আসলে হল কোন দেশের বা কোন কম্পানির প্রতি সেকেন্ডে কত পরিমান ডেটা ট্রান্সফারের সক্ষমতা আছে । যেমন তিনটি সাবমেরিন দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশের মোট ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা ৪০০ জিবি পি এস পার সেকেন্ড । মানে বাংলাদেশের উতপাদিত ব্যান্ডউইথের পরিমান ৪০০ জিবিপিএস ।

ব্যান্ডউইথ এর হিসাবঃ

বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথের পরিমান ৪০০ জিবিপিএস কিন্তু বর্তমানে মোট ব্যাবহৃত ব্যান্ডউইথ হত ১৭০ জিবিপিএস এর মত । ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ প্রোভাইডার রা সরকার থেকে ব্যন্ডউইথ কিনে টেরা বাইট আকারে । এখন প্রশ্ন আসতে পারে টেরা বাইট কি ?  বা কিভাবে হিসাব করা হয় কিলো, মেগা, গিগা? এই নিয়ে আছে বেশ কয়েকটি প্রমিত মান। আই বি এম এর মতে এক কিলোবাইট হল ১০২৪ বাইট, এক মেগাবাইট হল ১০২৪ কিলোবাইট, এক গিগাবাইট (জিবি) হল ১০২৪ মেগাবাইট।
 

টেরাবাইট: ১০০০ বা ১০২৪ গিগাবাইট এ হয় এক টেরাবাইট। আজকাল বাজারে এক টেরাবাইট কিংবা দুই টেরাবাইট এর হার্ডড্রাইভও পাওয়া যাচ্ছে। এক টেরাবাইট প্রায় এক ট্রিলিয়ন বাইট।

পেটাবাইট: টেরার পরে ধাপ হল পেটা। ১০০০ অথবা ১০২৪ টেরাবাইট এর সমান হল এক পেটাবাইট। আবার বলা যায়, এক পেটাবাইট সমান ১০০ লক্ষ গিগাবাইট।

এক্সাবাইট: ১০০০ পেটাবাইট বা ১০২৫ পেটাবাইট সমান হল এক এক্সাবাইট। আরেক দিকে বলা যায়, ১০০ কোটি গিগাবাইট সমান হল এক এক্সাবাইট।

জিটাবাইট: ১০০০ বা ১০২৪ এক্সাবাইট সমান এক জিটাবাইট।

ইয়োটাবাইট; ১০০০ বা ১০২৪ জিটাবাইট সমান এক ইয়োটাবাইট।

ব্রন্টোবাইট: ১০০০ বা ১০২৪ ইয়োটাবাইট সমান এক ব্রন্টোবাইট। কেন যে এই মাপটা তৈরি করেছে সেটাই আশ্চর্য... অন্তত আগামী কযেক হাজার বছরে এই সাইজ দিযে কোনকিছু হিসাব করা যাবে না, কিংবা এক ব্রন্টোবাইট সমান হাড্রডাইভ বার হবে না। এক ব্রন্টোবাইট গনিতে লেখার জন্য ১ এর পরে ২৭ টা শুন্য বসাতে হবে। চিন্তা করুন এবার....।

ব্যান্ডউইথ এর দামঃ

এতক্ষন যে হিসেব টা দেখলেন তা এখে হয়তো মাথায় পেন্ডুলাম ঘুরছে । কিন্তু যাই হোক প্রয়োজনই আবিষ্কারের জনক । মানে প্রয়োজন না হলে তো আর এটা আবিষ্কার হত না । যাই হোক এবার আসি ব্যান্ডউইথের দামে । আমাদের মোবাইল কম্পানি এক টেরাবাইট কিনে প্রায় ৮০০০ টাকায় ( + ভ্যাট )
তাহলে ৮০০০/১০২৪ = ৭.৮৫ টাকা । মানে তাদের এক জিবি কেনা পড়ে সর্বোচ্চ ৮ টাকা ।
কিন্তু তারা প্রতি গিগাবাইট ( জিবি ) বিক্রি করে ২৫০+ টাকা (+ভ্যাট) এ ।
কি মাথায় আগুন ধরে গেছে ? জ্বি ব্রাদার, এসব কসাইরা এভাবেই আমাদের রক্তে কেনা টাকা চুষে খাচ্ছে । অথচ আমাদের কর্তৃপক্ষ চোখে টিনের চশমা আর কানে হেডফোনে টুনির মার গান লাগিয়ে বিড়ি ফুঁকছে ।

ব্যান্ডউইথ ডাকাতিঃ

ভারতের ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ খবর দিয়েছে, বাংলাদেশ ভারতের টাটা টেলিকমিউনিকেশনের কাছে ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ প্রতি বছর মাত্র ১ কোটি ডলারে (৮০ কোটি টাকা) বিক্রি করার চুক্তি করতে যাচ্ছে। অথচ ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথের বাজারমূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা! তার মানে ৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকা লস দিয়ে ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে যাচ্ছে আমাদের মাথা মোটা কর্তাব্যক্তিরা …!!!
এই যে অসামঞ্জস্যতা, অনিয়ম- এসবই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্তর থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত আষ্টেপৃষ্ঠে বাসা বেঁধেছে। প্রয়োজনের তুলনায় ব্যান্ডউইথ পড়ে আছে, তবু আরো কেনার উদ্যোগ তো আসলে হরিলুট করারই নামান্তর! আর ভারতকে প্রায় ‘মাগনা’ ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললেই আপনি-আমি ‘নব্যরাজাকার’-এর ট্যাগ খাব! সুতরাং কোনো প্রশ্ন না তুলে কানে তুলা গুজে নীরব থাকুন।

পরিশেষেঃ 

ভাইরে, বাংলাদেশ অনন্ত জলিলের দেশ । অসম্ভব সম্ভবের দেশ । এদেশে দু পয়সা, দুটো চড় আর পাছায় দুটো লাথি দেবার ক্ষমতা সবাই আপনার গোলাম । অথচ আমাদের সরকার সঠিক পরিকল্পনার অভাব আর দুর্নিতির কারনে সব সম্ভবের দেশে ইন্টারনেটের উচ্চগতি আর সুলভ মুল্য অসম্ভব করে তুলেছে ।  তারপর ও আনলিমিটেড ব্রডব্যান্ড ও ওয়াইফাই রাউটারের কল্যানে আমরা অন্তত পক্ষে কিছু সাস্রয় পাচ্ছি । ইন্টারনেটের দাম গ্রাহক পর্যায়ে কমাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সু দৃষ্টি কামনা করছি ।
Previous
Next Post »