মাত্র ১১ হাজার টাকার ফোনে ৩ গিগাবাইট র্যাম! কিছুদিন আগেও এমনটা বিশ্বাস করা যেতোনা, কিন্তু বর্তমানে ওয়ালটন ও অন্যান্য কিছু কোম্পানীর মাধ্যমে দেশীয় বাজারে এতো অল্প দামে ৩ গিগাবাইট র্যামের ফোন পাওয়া যাচ্ছে। Primo R4S এর অন্যান্য আকর্ষণীয় ফিচারের মধ্যে ৫ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে, ৬৪ বিট কোয়াডকোর প্রসেসর, ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ, ফোরজি সুবিধা, এলইডি ফ্ল্যাশযুক্ত রেয়ার ক্যামেরা, BSI সেন্সরযুক্ত ফ্রন্ট ক্যামেরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসবের পাশাপাশি ২,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারিযুক্ত এই ফোনে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপের জন্য আছে এক্সট্রিম পাওয়ার সেভিং মুড, যা ব্যবহার করে মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও অনায়াসে বেশ কয়েক ঘন্টা চালানো যায়।
আনবক্সিং:
Primo R4S কেনার পর আপনি এর সাথে যা যা পাবেন-
- চার্জার অ্যাডাপ্টার
- ডাটা ক্যাবল
- ইয়ারফোন
- ইউজার ম্যানুয়াল
- ওয়ারেন্টি কার্ড
Primo R4S ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ ললিপপ ব্যবহার করা হয়েছে। আর OTA আপডেট ফিচার থাকার কারণে ভবিষ্যতে আপডেট পাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
আকর্ষণীয় ডিজাইনের প্রিমো R4S সহজেই ক্রেতাদের নজর কাড়তে সক্ষম। ফোনটির পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে স্পিকার। এর সামনের দিকে উপরের অংশে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা, প্রক্সিমিটি সেন্সর আর নোটিফিকেশন লাইট। আর নিচের দিকে আছে অপশন, হোম ও ব্যাক বাটন।
ফোনটির ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্টটি রয়েছে উপরের দিকে আর ইউএসবি পোর্ট রয়েছে নিচের দিকে। Primo R4S এর ভলিউম কী ও পাওয়ার কী একপার্শ্বে আর সিম ট্রে অন্যপার্শ্বে দেওয়া হয়েছে। ১৪৩ মিলিমিটার উচ্চতার এই ফোনটি ৭০.৩ মিলিমিটার আর এর পুরুত্ব ৭.৯ মিলিমিটার। ব্যাটারিসহ এই ফোনের ওজন ১৪৯ গ্রাম।
ডিসপ্লে:
এই ফোনে ৫ ইঞ্চির সুপার আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, আর এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১২৮০x৭২০ পিক্সেল ও পিক্সেল ডেনসিটি ২৯৪ পিপিআই।
ইউজার ইন্টারফেস:
Primo R4S এ কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হওয়ায় এতে কোন আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার নেই। দেখে নিন ফোনটির ইউজার ইন্টারফেস-
এছাড়া এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের থিম ব্যবহারের সুবিধাও আছে।
সিপিউ, চিপসেট ও জিপিউ:
১.৩ গিগাহার্টজ গতির কোয়াডকোর প্রসেসরের Walton Primo R4S এ মিডিয়াটেকের ৬৪ বিট চিপসেট MT6735 ব্যবহৃত হয়েছে। আর চিপসেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ফোনে মালি T720 জিপিউ ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করতে পারবেন।
স্টোরেজ:
Primo R4S ফোনটিতে ১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর পাশাপাশি আছে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা। এছাড়া এতে OTG সুবিধা থাকায় এতে পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করার সুযোগ তো থাকছেই! আর এই ফোনে থাকা ৩ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে বুট আপের পর ২.২ গিগাবাইট ফাঁকা থাকে।
ক্যামেরা:
Primo R4S এ আছে BSI সেন্সর ও এলইডি ফ্ল্যাশযুক্ত ৮ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরা। এতে BSI সেন্সর থাকায় আপনি অনায়াসেই বেশ ভালো ছবি তুলতে পারবেন। এর ক্যামেরায় অটোফোকাস, টাচ ফোকাস, প্যানোরোমা, ডিজিটাল জুম, সেলফ-টাইমার প্রভৃতি ফিচার বিদ্যামান।
দেখে নিন Primo R4S এর ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংস-
চলুন Primo R4 এর ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি দেখে নেওয়া যাক-
আপনি যদি সেলফি তুলতে ভালোবাসেন কিংবা ভিডিও কলিং করতে চান, সেক্ষেত্রে এই ফোনে পাচ্ছেন BSI সেন্সরযুক্ত ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা।
মাল্টিমিডিয়া:
৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকসম্পন্ন এই ফোনের সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ড কোয়ালিটি মানানসই।
এই ফোনে আরো আছে এফএম রেডিও, সে সাথে থাকছে এফএম রেডিও রেকর্ডার। ফলে আপনি আপনার পছন্দের কোন রেডিও প্রোগ্রাম অনায়াসেই রেকর্ড করতে পারবেন।
অডিও এর কথা তো গেলে, এবার আসা যাক ভিডিওর কথায়। ৬৪ বিট কোয়াডকোর প্রসেসরের এই ফোনে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলেছে।
গেমিং পারফরম্যান্স:
তরুণ প্রজন্মের স্মার্টফোন কেনার পেছনে গেমিংয়ের উদ্দেশ্যটাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। সেদিক থেকে অক্টাকোর প্রসেসর ও মালি টি৭২০জিপিউসমৃদ্ধ Primo R4S এর গেমিং পারফরম্যান্স পছন্দসই। ৬৪বিট চিপসেট ও ৩ গিগাবাইট র্যামবিশিষ্ট এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে নিড ফর স্পিড নো লিমিটস, গ্র্যান্ড থেফট অটো, হিরোস অব ৭১, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
সেন্সর:
ওয়ালটনের এই ফোনে অ্যাক্সিলেরোমিটার, লাইট, প্রক্সিমিটি প্রভৃতি সেন্সর বিদ্যমান।
সিম:
ডুয়েল সিম সুবিধার Primo R4S এর উভয় স্লটেই থ্রিজি ও ফোরজি সুবিধা উপভোগ করা যায়।
রং:
কালো ও সোনালী- এই দুই রংয়ে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে Walton Primo R4S
কানেক্টিভিটি:
এই ফোনে ফোরজি সুবিধার পাশাপাশি ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। আরও আছে জিপিএস, এ-জিপিএস, ডিজিটাল কম্পাস প্রভৃতি সুবিধা।
ব্যাটারি:
৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের Primo R4S এ ২,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। ফুল চার্জ দিয়ে টানা ৪ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ ও এইচডি ভিডিও উপভোগ করার পর এর চার্জ ৩৪% এ নেমে এসেছিলো। আর স্বাভাবিক ব্যবহারে অনায়াসেই একদিন চালিয়ে নেওয়া যায়। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ব্যাকআপের জন্য আছে এক্সট্রিম পাওয়ার সেভিং মুড।
ওটিজি:
ওয়ালটনের নতুন এই ফোনে রয়েছে OTG (USB On The Go) সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী এতে মাউস, কীবোর্ড, পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবেন।
বেঞ্চমার্ক:
Primo R4S এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে এর স্কোর এসেছে ৩১৭৩৬; অন্যদিকে GeekBench এ এর স্কোর এসেছে ৬১৩ (সিঙ্গেল-কোর) ও ১৮১৭ (মাল্টি-কোর)
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ NenaMark এ Primo R4S এর স্কোর এসেছে ৬৪.৮
স্পেশাল ফিচার:
এই ফোনের নানা স্পেশাল ফিচারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্মার্ট জেশ্চার, মোবাইল সিকিউরিটি, সিস্টেম ম্যানেজার, সাসপেন্ড বাটন প্রভৃতি।
OTA আপডেট সুবিধা:
এই ফোনে OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
দাম:
অধিক র্যাম, নজরকাড়া ডিজাইন ও আকর্ষণীয় সব ফিচারসম্পন্ন Walton Primo R4S এর দাম ক্রেতাদের সাধ্যের কথা বিবেচনা করে মাত্র ১০,৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ; ফিচারের তুলনায় যা যথেষ্ট সাশ্রয়ী।
একনজরে Primo R4S এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহ –
- অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ ললিপপ অপারেটিং সিস্টেম
- ৫ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে
- ১.৩ গিগাহার্টজ গতির কোয়াডকোর প্রসেসর
- ৩ গিগাবাইট র্যাম
- মালি T720 জিপিউ
- ৮ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা
- ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা
- এলটিই সুবিধা
- ওটিজি সাপোর্ট
- ২,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি
যেসব কারণে পছন্দ হয়েছে Primo R4s-
- ৩ গিগাবাইট র্যাম
- সাশ্রয়ী মূল্য
- সুন্দর ডিজাইন
- BSI সেন্সরযুক্ত ফ্রন্ট ক্যামেরা
- ফোরজি সুবিধা
২,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির ব্যবহার ছাড়া আর কোন সীমাবদ্ধতা চোখে পড়ার মতো নয়।
Reply EmoticonEmoticon